মুড়ির গ্রাম চাঁদপুরের উচ্চগাঁ
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিক্ষণ ডটকম
চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের একটি গ্রাম উচ্চগাঁ, যা মুড়ির গ্রাম নামেও পরিচিত ।
এ গ্রামে বছরে প্রায় সাড়ে ৩ টন মুড়ি উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রামেও বাজারজাত হচ্ছে এই মুড়ি ।
গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবারের শতাধিক সদস্য মুড়ি ভাজা ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত । তারা দুই প্রকার মুড়ি ভেজে থাকেন ঘিঘজ ও টাপি । তবে টাপি মুড়ির চাহিদা বেশি ।
যেভাবে শুরু : উচ্চগাঁয়ের পাল বংশের অধিকাংশ পরিবার মুড়ি ভাজা ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত । এক সময় এ বংশের প্রায় সবাই এই পেশায় জড়িত থাকলেও বর্তমানে বেশ কিছু পরিবারের সন্তানরা পড়ালেখা করে চাকরি নিয়েছে । তাদের বাবা-মা ও মুড়ির কারবার বন্ধ করে দিয়েছে । বর্তমানে উল্লেখযোগ্য মুড়ি বিক্রেতা হলেন- অভিনাশ পাল, বিমল পাল, সুমন পাল, অমর পাল, দুলাল পাল, খোকন পাল, ভূষণ পাল, গৌতম পাল, নারায়ণ পাল, লক্ষণ পাল, সঞ্জয় পাল, শংঙ্কর পাল, পীযুষ পাল ও যুবরাজ পালসহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবার ।
মুড়ি শিল্পী প্রিয়লাল পালের ছেলে অভিনাশ পাল বলেন, আমাদের গ্রামে প্রতিদিন প্রায় ১৫ মণ মুড়ি ভাজা হয় । শীতে সাধারণত টাপি আর গরমে ঘিঘজের চাহিদা বেশ বেশি । তবে টাপির চাহিদা মোটামুটি সারা বছর থাকে ।
পাল বাড়ির লক্ষণ পালের ছেলে সুমন পাল, তার মা ও বৌদিকে নিয়ে মুড়ি ভাজার সঙ্গে জড়িত । সুমন বলেন, প্রিায় ১০ বছর মুড়ি ভাজার কাজ করছি । বর্তমানে মুড়ি ভেজে তেমন একটা লাভ হয় না । লাকড়ি, লবণ, ধানের দাম বেড়েছে ।
কিন্তু মুড়ির দাম বাড়েনি । বর্তমানে এক কেজি মুড়ি ভাজতে গিয়ে প্রায় ৭৫ টাকা ব্যয় হয় । গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাজারজাত করতে গিয়ে পাইকারি বিক্রি করা পর্যন্ত খরচ পড়ে প্রায় ৭৮ টাকা । স্থানীয়রা ৭৮ টাকা কেজিতে মুড়ি কিনে ৯০ টাকায় বিক্রি করছে । বাবা-চাচারা মুড়ি বিক্রি করে যে লাভ করে গেছেন । সেই লাভ এখন আর নেই ।
রাখাল পালের সঙ্গে ফুলবানুর (৭৫) বিয়ে হয়েছে ৬০ বছর আগে। তিনি বলেন, শ্বশুরবাড়িতে এসেই দেখি এ বাড়ির লোকজন মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত । বাবার বাড়িতে এ কাজে অভ্যস্ত না থাকলেও স্বামীর বাড়িতে এসে অভ্যস্ত হই । এক সময় প্রচুর মুড়ি ভাজতাম । এখন ছেলেরা বড় হয়েছে, চাকরি করছে । তাই আমাদের পরিবার মুড়ি ভাজা বন্ধ করে দিয়েছে ।
বাজারজাতকরণ : এই গ্রামের মুড়ি চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার, পুরান বাজার, হাজীগঞ্জ, মতলব, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় । এই মুড়িকে এক নামে সবাই উচ্চগাঁ এলাকার মুড়ি হিসেবে চিনে । এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান মজুমদার বলেন, এই গ্রামের বাসিন্দারা শত বছর পূর্ব থেকেই মুড়ি ভাজা একটি পেশা হিসেবে কাজ করছে। উচ্চগাঁ গ্রাম একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম । মুড়ি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ ।
প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদুল